গতকাল আরো একটি হাইভোল্টেজ ক্রিকেট ম্যাচ দেখল ক্রিকেট বিশ্ব। অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের মধ্যকার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচে টানটান উত্তেজনায় শেষ ওভারে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জয়লাভ করেছে অস্ট্রেলিয়া।
এইদিন ম্যাচের শুরু থেকেই ছিল টানটান উত্তেজনা। ইনিংসের প্রথম দুই বলে উইকেট তুলে নেন অস্ট্রেলিয়ার ফাস্ট বোলার মিচেল স্টার্ক। সেখান থেকে জনি বেয়ারস্টোর সেঞ্চুরি এবং ক্রিস ওকসের শেষের ঝড়ো ফিফটিতে ইংল্যান্ড সংগ্রহ করে ৩০২ রান।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই টপ অর্ডারের পাঁচজন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বিপদে পড়তে থাকা অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও অ্যালেক্স কেয়ারি। ২জনে তুলে নেন স্মরণীয় সেঞ্চুরি।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের শেষ ওয়ানডে ম্যাচে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। ইনিংসের প্রথম দুই বলে জেসন রয় এবং জো রুটকে প্যাভিলিয়নের পাঠিয়ে দেন ফাস্ট বোলার মিচেল স্টার্ক। অধিনায়ক ওয়েন মর্গ্যানকে নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করেন ব্যাটসম্যান জনি বেয়ারস্টো।
কিন্তু এই সিরিজে দুর্দান্ত বোলিং করতে থাকা অ্যাডাম জাম্পা আবারো তুলে নেন জোড়া উইকেট। প্রথমে শিকার করেন অধিনায়ক মর্গ্যানকে এবং এর পরেই পরে বিদায় করেন জস বাটলারকেও। তবে এর পরই ঘুরে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড। স্যাম বিলিংসকে সাথে নিয়ে ১১৪ রানের জুটি গড়েন জনি বেয়ারস্টো।
৫৮ বলে ৫৭ রান করে অ্যাডাম জাম্পার বলে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন স্যাম বিলিংস। তবে অন্য প্রান্ত থেকে সেঞ্চুরি তুলে নেন জনি বেয়ারস্টো। ১২৬ বলে ১২ চার ও দুই ছক্কায় প্যাট কামিন্সের বলে ১১২ রান রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন জনি বেয়ারস্টো।
জনি বেয়ারস্টো আউট হলে ব্যাটিংয়ে নেমে ঝড় তোলেন অলরাউন্ডার ক্রিস ওকস। ৩৯ বলে ৬ চারে ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন এই অলরাউন্ডার। জ্যাম্পা ৫১ রানে নেন ৩ উইকেট। দারুণ শুরু এনে দেওয়া বাঁহাতি পেসার স্টার্ক খরুচে বোলিংয়ে ৩ উইকেট নেন ৭৪ রানে।
৩০৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। শুরুতে জোড়া উইকেট তুলে নেন ক্রিস ওকস। অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চকে এলবিডব্লিউ করার পর বিদায় করেন মার্কাস স্টয়নিসকে। এই দিনেও ব্যর্থ ছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। আক্রমণে এসে নিজের প্রথম ওভারেই দারুণ এক ডেলিভারিতে বাঁহাতি এই ওপেনারকে বোল্ড করে দেন রুট।
পরে কট বিহাইন্ড করেন মিচেল মার্শকে। সফরকারীদের বিপদ আরও বাড়িয়ে রান আউট হয়ে যান মার্নাস লাবুশেন। সপ্তদশ ওভারে ৭৩ রানে নেই অস্ট্রেলিয়ার ৫ উইকেট। তবে এদিন ভাগ্য সহায় ছিল অস্ট্রেলিয়ার দিকে। দুই প্রান্তে থাকা দুই ব্যাটসম্যান ম্যাক্সওয়েল এবং কেয়ারি জীবন ফিরে পেয়ে জ্বলে ওঠে এই দুই ব্যাটসম্যান।
দুই জনই তুলে নেন সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন ম্যাক্সওয়েল এবং অভিষেক সেঞ্চুরি তুলে নেন কেয়ারি। এই দুইজনের ২১২ রানের জুটি ভাঙ্গেন আদিল রশিদ। তবে ততক্ষনে ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় অস্ট্রেলিয়া।
৯০ বলে ৭ ছক্কা ও চারটি চারে গড়া এই ইনিংসের পথে পৌঁছান তিন হাজার রানের মাইলফলকে।
পরের ওভারে ফিরে যান কেয়ারিও। আগের সেরা ৮৫ ছাড়িয়ে এই কিপার-ব্যাটসম্যান করেন ১০৬ রান। তার ১১৪ বলের ইনিংসে সাত চারের পাশে ছক্কা দুটি।
শেষ তিন ওভারে প্রয়োজন ছিল ২১ রান, হাতে ছিল ৫ উইকেট। ক্রিজে ছিলেন দুই সেঞ্চুরিয়ান। পরপর দুই ওভারে তাদের বিদায়ে শঙ্কায় পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। দুই টেলএন্ডারকে দেখে একটা জুয়াই খেলেন ইংলিশ অধিনায়ক। মার্ক উডকে রেখে শেষ ওভারে বল তুলে দেন রশিদের হাতে। তার ছিল ১০ রানের পুঁজি।
ম্যাচের প্রথম দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষকে জোর ধাক্কা দেওয়া স্টার্কের ব্যাট থেকেই আসে জয়সূচক রান। তিন বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১১ রান করে তিনিও ফেরেন নায়কের বেশে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩০২/৭ (রয় ০, বেয়ারস্টো ১১২, রুট ০, মর্গ্যান ২৩, বাটলার ৮, বিলিংস ৫৭, ওকস ৫৩*, কারন ১৯, রশিদ ১১*; স্টার্ক ১০-০-৭৪-৩, হেইজেলউড ১০-০-৬৮-০, কামিন্স ১০-০-৫৩-১, জ্যাম্পা ১০-০-৫১-৩, মার্শ ৬-০-২৫-০, ম্যাক্সওয়েল ৪-০-২৩-০)
অস্ট্রেলিয়া: ৪৯.৪ ওভারে ৩০৫/৭ (ওয়ার্নার ২৪, ফিঞ্চ ১২, স্টয়নিস ৪, লাবুশেন ২০, মার্শ ২, কেয়ারি ১০৬, ম্যাক্সওয়েল ১০৮, কামিন্স ৪*, স্টার্ক ১১*; ওকস ১০-০-৪৬-২, আর্চার ৯-০-৬০-১, উড ৯-১-৪০-০, রুট ৮-০-৪৬-২, কারান ৬-১-৪০-০, কারান ৭.৪-০-৬৮-১)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ২-১ ব্যবধানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: গ্লেন ম্যাক্সওয়েল
ম্যাচ অব দা সিরিজ: গ্লেন ম্যাক্সওয়েল